বাক্‌ ১১৪ ।। গিলি হাইমোভিচ এবং অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়



কথোপকথন  
 (জুন, ২০১৬ — জানুয়ারি, ২০১৭)
ভাষান্তর : পূজা নন্দী  
দ্বিতীয় পর্ব 

পরিচিতিঃ গিলি হাইমোভিচ
ইস্রায়েলের হিব্রু ভাষার লেট নাইন্টিজের কবি, অনুবাদক, সাংবাদিক এবং ভিস্যুয়াল আর্টিস্ট গিলি হাইমোভিচ-এর জন্ম ’৭৪-এ। ইস্রায়েলে। গিলি মূলত দ্বিভাষিক কবি। হিব্রু এবং ইংরেজি দুটি ভাষাতেই লেখেন। হিব্রুতে প্রকাশিত কবিতার বই ৬টি। এবং ১টি ইংরেজি কবিতার সংকলন। ‘সেনেকা রিভিউ’, ‘লিটেরারি রিভিউ অফ কানাডা’ (এলআরসি), ‘রাইটিং দ্য নিউ টরন্টো’, ‘অ্যাসিম্পটোট’, ‘লিলিথ’, ‘উইমেন ইন জুডাইজম’, ‘স্টেলার শোকেস জার্নাল’, ‘এজরা ম্যাগাজিন’, ‘ইন মাই ব্যাড ম্যাগাজিন’, ‘ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি রিভিউ’, ‘পোয়েট্রি ইন্টারন্যাশনাল’ প্রভৃতি পত্রিকার সাথে ইস্রায়েলের অন্যতম পত্রিকা ‘এমডা’, ‘হেলিকন’-এ প্রকাশিত হতে দেখা যায় ওঁর লেখা।

Camera Obscura Arts School থেকে ভিস্যুয়াল আর্ট নিয়ে এবং ইস্রায়েলের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ফর ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ থেকে এক্সপ্রেসিভ আর্ট থেরাপি নিয়ে পড়াশোনা করেছেনগিলি পেশায় একজন এক্সপ্রেসিভ আর্ট থেরাপিস্ট এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর শিক্ষক। বর্তমান ঠিকানা ইস্রায়েল এবং কানাডা।

২০০৯-এর এপ্রিলে ইস্রায়েলের ‘হারেৎজ’ পত্রিকার ঈলান বার্কোইৎজকে দেওয়া গিলির একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশবিশেষ এখানে দিলাম, ওঁর কাব্য চেতনাকে বুঝতে মনে হয় অনেকটাই সাহায্য করবে এই অংশটি।

আপনার কবিতা ভীষণ খোলামেলা, অনাবৃত, ব্যক্তিগত অনুষঙ্গের প্রাচুর্য। এটা আপনাকে কোনওভাবে অস্বাচ্ছন্দ্যতা এনে দেয় না? আপনি শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে লিখছেন, যৌনকামনা নিয়ে লিখছেন দ্বিধাহীন, পর্নোগ্রাফির কথা লিখছেন, আপনার সঙ্গীদের নামও লিখে ফেলছেন। এই স্টাইল আপনি কোথা থেকে পেলেন?

‘লেখার প্রয়োজনে যেটা লিখতে হয়, সেটা লেখার জন্য আমি সৎ থাকার চেষ্টা করি। লেখা একটা অপরচুনিটির নাম। রিপ্রেস করা বা দাবিয়ে রাখা নয়। এবং আমি এই অপরচুনিটির অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করি। আলঙ্কারিক, ডেকরেটিভ, অত্যধিক বাগাড়ম্বর, শব্দবাহুল্য, কেতাদুরস্ত এরকম কোনও কিছুতে আমার আগ্রহ নেই। আমি অন্ধকারগুলো নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী। আমার ঘড়ির ওপর আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই না। এটাই আমার কাছে অপরিহার্য। যখন একটা কবিতা সুমিষ্টতা/কোমলতা বা মাধুর্য নিয়ে কাজ করে, তখন বোঝা দরকার মিষ্টত্ব কাকে বলে? এটা চরিত্রগত বা মজ্জাগত একটা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এটা একটা ক্যারেক্টারিস্টিক্স। পার্টনারদের যে নামগুলো আমার লেখায় উঠে আসে, তারা দু ধরনের ক্যাটেগরিতে পড়ে। কিছু নাম কাল্পনিক। কিছু রিয়েল। [...] আমি যেখানেই যাই, সর্বত্রই আমি একজন কবি। কবির এই মালপত্রকে আমার নিজের থেকে সরিয়ে রাখার কোনও উপায় আমার কাছে নেই। কবি হওয়াটা আমি বেছে নিইনি। ...এটা এমন একটা কিছু যা আমাকে বেসামাল করেছে, নাস্তানাবুদ করেছেআমি খুব গোপনে, লুকিয়ে লিখি। একটা পেন আর একটা খাতা আমার কাছে ক্রাচের মতো। [...] আমার বই ছাপার জন্য টাকাটা আমাকেই দিতে হয়। এই একই ভাগ্য প্রায় সমস্ত হিব্রু কবির ক্ষেত্রেই সত্যি। এর বাইরে বলা যায়, I lose control on the page… [...] আমার কবিতায় প্রথা বা রীতিমাফিক বাহ্যাবয়ব বা ফর্ম না থাকাটা, সেই বুর্জোয়া কনসেপ্টকে বিরোধিতার একটা অংশ, যে কনসেপ্ট বলে, যা কিছুর বাহ্যাবয়ব নেই তাকে অবয়ব দেওয়াটা কবিতার একটা কাজ। কবিতাকে রক্ত ঝরতে থাকা অবস্থায় ছেড়ে দিতে পছন্দ করি আমি। ...আমার কাছে কবিতা এমন জিনিস, যা তোমাকে দেওয়া হয়েছে, এবং তুমি সেটা আরেকজনকে দিচ্ছ। আমি শুধু চেষ্টা করি নিজেকে নির্ভুল এবং মগ্ন রাখতে, যতটা পারা যায় তারগুলো ভীষণভাবে সুরে বেঁধে রাখতে।’

গ্রন্থপঞ্জী
(হিব্রু)
‘লিভিং অন আ ব্ল্যাঙ্ক পেজ’ [২০০১]; ‘রিফ্লেক্টেড লাইক জয়’ [২০০২]; ‘মাই ফোর্সেস ফায়ার’ [২০০৭]
‘লিন্ট সিজন’ [২০১১]; ‘বেবি গার্ল’ [২০১৪]; ‘ল্যান্ডিং লাইটস’ [২০১৬]
(ইংরেজি)
‘লিভিং অন আ ব্ল্যাঙ্ক পেজ’ [২০০৭]
ওয়েবসাইট: http://www.poetryon.com/site/

Poetry videoFulfilled Lake  

আমার কবিতাগুলি প্রশ্ন করবে;
জরুরি নয় যে তাদের উত্তর দিতে হবে

৬। অর্জুন : গিলি, আপনি রাইটিং-ফোকাসড আর্ট থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করেন। আপনি সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কাজ করেছেন ফটোগ্রাফি, সিনেপোয়েম নিয়েকবিতা এবং শিল্পকলার অন্যান্য মাধ্যমের (লোকায়ত উপাখ্যান সহ) মধ্যে আদানপ্রদান-ভিত্তিক সম্পর্ক নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনাটা ঠিক কী?

গিলি : আমি মনে করি বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের মধ্যে আদানপ্রদান-ভিত্তিক সম্পর্কগুলো একটা সচেতন বোধ তৈরি করে, যা খুব স্বাভাবিকশিশুরা যখন নাটক করে তারা নাচও করতে পারে, এবং তাদের নাচের জন্য একটি ছড়াও বানাতে পারে, ছড়াটিকে ফুটিয়ে তুলবার জন্য একটি ছবিও আঁকে। আমরা রূপান্তর করি ভিন্ন ‘কার্যবিধি’র মধ্যে, অর্থাৎ আমাদের চারপাশের সম্পর্কে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করি। কোন কিছু হয়তো আমাদের মনযোগ আকর্ষ কর এবং তারপর, লক্ষ্য করি তার গন্ধ, অথচ পরে হয়তো কোন একটা তীব্র শব্দ মনযোগ কেটে দিলআমি বলছি না যে আমাদের একাধিক শিল্পমাধ্যমে দক্ষ হওয়া উচিত, বা হতে পারি, কিন্তু তারা যে সংযোগ তৈরি করতে সক্ষম সেটা উপলব্ধি করলে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারব। আমি বিভিন্ন শিল্পীদের সঙ্গে যৌথতায় কাজ করার মতোই অন্যান্য মাধ্যমকে একীভূত করতে পছন্দ করি। আমার কবিতার মাধ্যমে আরেকজনের কাছে পৌছতে এবং এটা দেখতে যে আমার কবিতা কীভাবে তার সীমানা প্রসারিত করছে — একজন সহসঙ্গী থাকা অবশ্যই ভালোঅবশ্য এটা ঝুঁকিমূলকও। আপনি ফলাফল অনুমান করতে পারবেন না এবং এক্ষেত্রে আপনার নিজের কাজটিকে আপনার দৃঢ়মুষ্টি থেকে কিছুটা মুক্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, যখন আপনি আপনার কাজের প্রকাশ করেন, তখন কিছু মাত্রায় এটা হয়েই থাকে

৭। অর্জুন : আপনি কি মনে করেন যে, আপনার কবিতা এবং আপনার ফটোগ্রাফি অথবা সিনেপোয়েম কোনভাবে একে পরকে সম্পুর্ণ করে?

গিলি : হ্যাঁ, মনে করি। তারা উভয়েই ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের সন্ধানে দৈনন্দিন উপাদানগুলোকে নিয়ে কাজ করে, এমনকি সূক্ষ্ম খুঁটিনাটিগুলোকেও পর্যবেক্ষ করে যেটা হয়তো বড়ো একটা কিছুকে চিহ্নিত করে কিংবা যা দেখা গেছিল তারচেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যময় কিছুকে সূচীত করে। এর অর্থ, তারা প্রত্যেকে সেই কল্প-মানসপ্রতিমাগুলোকে প্রয়োগ করে আরও নির্দিষ্ট, আরও অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতাগুলোর প্রতিকৃতি নির্মাণের পথে ভাষা বা আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা উপাদানগুলোকেই তারা ব্যবহার করে সেই জিনিসগুলোর চিহ্ন বা প্রমাণ হিসেবে যেগুলো খুব কাছের কিন্তু যাদের ধরা খুব কঠিন।  

৮। অর্জুন : আমাদের মনের প্রকৃতি দ্বারা আরোপিত যে ইউনিভার্সকে আমরা অনুভব করি—তাকে বুঝবার ক্ষমতায় আমাদের সীমা নেই, তবে সীমাবদ্ধতা আছে একজন কবি, স্রষ্টা হওয়ার দরু আপনি আপনার কাজে কীভাবে এটাকে অন্বেষণ করেন?

গিলি : আমার ধারণা, একটু একটু করেএটাকে উপলব্ধি করার কোন নির্ধারিত পথ আছে বলে আমি মনে করি না। আমরা কত কম জানি, এবং এমনকি তার থেকেও বেশি, আমরা যেটা জানি বলে বিশ্বাস করি সে বিষয়ে আমরা কত সাবজেক্টিভ, একজন কবি বলেই হয়তো তা নিয়ে আমি অনেক বেশি সচেতন। তুমি হয়তো খেয়াল করে থাকবে আমার কবিতাগুলোতে, আমিও জবাব দেওয়ার চাইতে উপলব্ধি ও বোঝাপড়াভিন্ন ভিন্ন বিকল্পগুলি পেশ করে থাকি আমি সাধারণত পছন্দ করি যে আমার কবিতাগুলি প্রশ্ন করবে; জরুরি নয় যে তাদের উত্তর দিতে হবে। ভাষার সচেতনতা থাকলে, এটা (ভাষা) নিজেই, নিজের জন্য আকর্ষণীএক অস্ত্র হতে পারে। এই প্রশ্নে ‘ইউনিভার্স’ শব্দটির সঙ্গে আমার অস্বস্তি সম্পর্কে আমি সচেতন। যখন আমি এটার ওপর প্রতিফলনের চেষ্টা করি, আমি দেখতে পাই যে এটা আমার নিজের চাইতে অনেক বেশি ধর্মীয় প্রেক্ষিত ব্যক্ত করছে অথবা একটা বিশ্বাস যা আমাদের চারপাশের সবাইকে একটি ঐক্যে একসাথে বেঁধে রেখেছে... এমন কিছুতো, এটা এখানে আদতেই একটা ছোট্টো, সাধারণ উদাহরণ, আমি কীভাবে একটা নির্দিষ্ট শব্দকে নির্দেশ করব এবং বিশ্লেষণ করব; এবারে দ্যাখো, যাকে তুমি ‘ইউনিভার্স’ নাম দিচ্ছ, সেই বিষয়টিকে যখন আমি এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করছি সে আমার জন্য কী নিয়ে এসেছে

৯। অর্জুন : আপনি যদি একের-পর-এক মিথ্যে বলতে বলতে একটা সত্যতে উপনীত হন তবে আপনি একজন গল্পকার। ফিকশন লেখক। আর যদি একগুচ্ছ সত্যি বলতে বলতে একটা ডাহা মিথ্যেতে গিয়ে পৌঁছা তবে একজন সাংবাদিক। কিন্তু একজন কবি কোথায় পৌছাতে চাইবেন?
  
গিলি : সম্ভবত একজন কবি হিসেবে, উপমামাধ্যমে তুমি হয়তো তোমার নিজস্ব ব্যক্তিগত সত্যের একদম মূলে এসে উপনীত হবে

১০। অর্জুন : আপনি কি মনে করেন যে হিব্রুতে যা লেখা হয়েছে, হচ্ছে, তা সাধারণ পাঠকের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে বা যথেষ্ট জনপ্রিয় হতে পেরেছে?

গিলি : এটা হয়নি, যদি কিছু মজা করে বলি, বাইবেলের বাইরে অন্যকিছু বলে হয়তো কিন্তু আমি আসলে মনে করি এর বিপরীত, মাসের কাছে একমাত্র ইংরেজিই সবচেয়ে বেশি কমিউনিকেটেড... অবশ্যই দুখের বিষয় এটা

ক্রমশঃ...
 

1 টি মন্তব্য: