বাক্‌ ১১৪ ।। তাজমীর উজ জামান




কেন্দ্র

বন্ধ দরজার মত একটি নাভি দেখিয়ে তুমি
চলে যাচ্ছো আমার হতাশার দিকে,
আর এইদিকে আমার মুগ্ধতার বাড়িঘর।
তল্লাটের নারীরা আগামী একশো বছর
আমাকে সন্দেহ করে যাবে।
আমার মুগ্ধতা বাড়ে।
এই পৃথিবীর কেন্দ্র একদিন আবিষ্কৃত হলে
হয়ত দেখা যাবে-
মূলত তোমার নাভিতেই পৃথিবীর কেন্দ্র অবস্থিত,
আর আমি উজ্জ্বল বিনয় নিয়ে
পড়শিদের নাড়ীর কাছে দাঁড়াতে পারছি,
যেন তোমার ব্যাপারে আমিই একমাত্র সফল ভবিষ্যদ্বক্তা।


অকালগাছ

ন্যূনো নদী কারো দিকে যেতে চেয়েছিল
হাতবারান্দায় এক চুমোর ললাট
থেমে আছে
ভাবনার ঠোঁটের পাথর হারালো কি নিজের ওজন?
ঝুলে আছি পৃথিবীর মহাকর্ষবোধে।
শামুকের গোপন প্রদাহ পরে আছো
চোখ থেকে মাশকারা
গোপন শেমিজে যাকে ছড়াতে দিয়েছো
কাছিমের খোলের ওপর
তোমার বয়স লিখে সেও কবে দূরত্বসুখ হতে চায়।
সত্য এই-
মানুষেরা অঙ্কুর না পেরিয়েই অকালগাছের মত
ভেঙে পড়বার আগে
তুমিতুমিফুল পেয়ে মরে যাওয়া শেখে



নির্ভরতা

এই গ্রহটির নাম 'দৃষ্টি'
গ্রহবাসী আপনি একা।
মূলত আপনি বর্ণান্ধ।
আপনার একটিই চশমা, যা দিয়ে আপনি বর্ণভেদ করেন।
এই গ্রহে লাল ও নীল বর্ণের দুটি ভোজ্যবস্তু আছে-
লাল রঙেরটি সুখাদ্য,
নীল রঙেরটি বিষাক্ত।
একদিন আপনি চশমাটি হারিয়ে ফেললেন।
আপনি এখনো বেঁচে আছেন?


হন্টন

হাঁটার সমস্যা হল-
শরীরকে গন্তব্যে ব'য়ে নিতে হয়;
এছাড়া, পায়ের অতিব্যবহার হয় বলে
সাধারণত
যাত্রার বিরতিতে পায়ের সেলাই খুলে দেখে নেই-
এই পা ম'রে যেতে যেতে
পায়ের বাচ্চাগুলো কত বড় হবে ।


সুখী পরিবার

আমি একটা মর্গে চাকরি করি ।
আমার স্ত্রীও পাশেই একটা গোরস্থানে কাজ নিয়েছে ।
দুপুরে আমরা একসাথে লাঞ্চ করি,
সন্ধ্যায় বাড়িও ফিরি একসাথে ।
পথে একটা হসপিটাল থেকে
আমরা আমাদের একমাত্র ছেলেকে পিক করি ।
আমাদের ছেলে ওখানে মানুষকে মৃত ঘোষণা করার
দায়িত্বে আছে ।


স্বপ্ন

শালকাঠের খাট, দাদা-আমলের;
সত্তুরে পা দিলে বুড়োরা ধাড়ীরা যেভাবে
আমাদের ধ'রে ধ'রে জোয়ানকালের কেচ্ছা পাড়ে,
শালকাঠের খাট--দাদা নেই, দাদী নেই,
বয়স্ক খুড়োরাও নেই আর, তাই--বুড়ো খাট
ঘুমাতে গেলেই
আমাদের ধ'রে ধ'রে দাদাদের দাদীদের খুড়োদের
জোয়ানবেলার গল্প কয় ।



এখন স্ব-কাঠে ফেরো নীরব গাছের সাথে-
ভূমি পেতে পৃথিবী ঘুমালে
জলের গভীর নিয়ে উড়ে যাওয়া কৈ ভালোবেসে দেখাবে
হ্যালুসিনেশান চোখ-
একথালা ভাত ওকে দেখে ফেলেছিল,
তারপর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসকল প্রেম
পাখির বিচারে ক্ষীণমায়া রয়ে গ্যাছে
কীসব শ্বাসের প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের বেঁচে থাকা
আজও জড়িত!

                                                (চিত্রঋণ : Camille Pissarro)

২টি মন্তব্য: