বাক্‌ ১১৪ ।। প্রকল্প ।। অভিষেক ঘোষ




উলকাটের মেয়ে
এমনই নগ্ন হয়ে ঘোরা যায় না আর পাহাড়ে। কেউ বলে জামা নাকি যাপনের চেয়েও বড়, কেউ বলে ভুটানের রাস্তার ধারে যখন বরফ পড়ে না আর ঠিক তখনই কবিতা পড়তে হয়, আমি পড়লাম আমার বরফের চাইয়ে লিখে রাখা কবিতা। আমি সমুদ্রের ধারে লিখে রাখা কবিতা পড়লেই, মনে হয় ঢেউ এসে সবাইকে জানিয়ে দেবে যে কবিতা থাকে না।
তবু কবিতা থাকানোর যে অসীম চেষ্টা এই পৃথিবীতে আছে তা আমরা সকলেই একজনের স্বামী হওয়ার চেষ্টা দেখেই আন্দাজ করতে পারি।কিন্তু এখানে বরফ যখন আমার সামনে দুটো লাইন তুলে দিল আমি আর তা না পড়ে পারলাম না,
আমি পড়লাম যদিও বা এই বরফের দেশে এসে 
“একটা বৃদ্ধা বেড়াল কত সন্তানের জননী 
তা ভাবতে ভাবতেই চশমার কাঁচ মোটা হয় 
পাঁচিলের ওপারে দিনের অবশেষ "
 আমি খুব একটা বৃদ্ধা নই,আমার এখানে যেহেতু কোন ফ্ল্যাট বাড়ি, আস্তাকুঁড়, নেই তাই বিড়ালও নেই। বরফে ভাম বিড়াল,
লোম ওয়ালা বিড়াল থাকলে মনে হয় সারভাইভ করতে পারত। আমি চশমা পড়ি, সে চশমা পড়লে আমাদের এখানের বরফ দেবতা বলেছেন, পাওয়ার ঠিক হয়ে যাবে, তাই চশমা টা ফেলে যখন পাঁচিলের কাছে এগচ্ছি, আমি দেখছি বরফ তো, ও তো বরফ, ও তো কোন পাঁচিল নিয়ে বেঁচেই নেই।

তবু বরফ আমায় আরও দুটো না তিনটে বুঝলাম না, লাইন দিল,
“তার মাথার পেছনে ঠিক তেমনই এক জ্যোতি রেখে গেছে
যেমন ক্যালেণ্ডারে পায় মহাপুরুষ
বৃদ্ধা বেড়ালের ছায়া 
দীর্ঘ হ'তে হ'তে অসীমে লীন 
অথচ”
আমি প্রথম শব্দটি পেয়ে ভালই ভাবলাম, ভাবলাম বরফ ঠিক কথাই লিখল, সত্যি তো আমার মাথার পিছনে কেমন এক সেই দূরদর্শনের কৃষ্ণ গুলোর যেমন হত তেমনই মনে হল নিজেকে, তারপর তো কে একটা কাকিমা এসে টি ভি বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়, আর বলে কাল  ঘোশুদার জন্ম দিন, কোন ঘোষ? অরবিন্দ ঘোষ বহু কাল আগে মরে গাছে উঠেছে, তার পিছনে ফল আছে এখন, কোন calendar nei. ওসব দারিদ্রের বাড়িতে বাড়িতে থাকে, যেখানে মহাপুরুষ হওয়ার আগেই, অনেক ছোট বেলায় একজন বাবা মারা যায়... যেভাবে একটা মাঝিকে লাথি না মারলে কেউ জানবে না ঠিক কিভাবে বরফে উল্লাট হয়ে শুয়ে থাকতে হয়।
কিন্তু যত ওই এভারগ্রিন কথা গুলো পায়ের মধ্যে পিষে আরও একবার তাকাই বরফের দিকে দেখি বরফ আবার বলে
সে জানেই না, মাতৃত্বের উদাসীন ঘুম 
চশমার মোটা কাঁচকে এখনও 
মনে করিয়ে দেয় লোলস্তন বিধবাদের কথা
আমার ভাল লাগে না বরফ, আমার তোমার কোন কথা ভাল লাগে না।আমি কখন থেকে বলছি, আমার মা নেই, বিধবা নেই, কুকুর নেই বিড়াল নেই, আর এই বরফে বিড়াল থাকলেও সে তো কবি বিড়াল, তোমার বিড়ালের মাই তো মারা গেল? কেন গেল জানলাম না এই বরফে বসে, তোমার বিড়াল কেন মাছ দুধ ছেড়ে শুধু হতাশ হল এটাও বুঝলাম না, যেখানে চশমার কথা বলছিলে বরফ আমি তোমায় এখন বলি তবে,
আমিও ক্লাস সেভেনে শ্রেয়া কে দেখে মিথ্যে মিথ্যে অন্ধ হওয়ার অভিনয় করেছিলাম, আমার চশমা এসেছিল, শ্রেয়া ছিল না কোনদিনও, যেমন এখনও আছে থাইল্যান্ডে, রোগা রোগা ছবি দেয় মাঝে মাঝে, কত বার রিকুয়েস্ট করেছি,
শোনেই নি। শ্রেয়া ছিলই না কোনদিনই, যেভাবে বরফ তোমার এই লেখাগুলো তুমি গরমের মধ্যে একটা হ্যাজাক আলোর ভিতরে বসিয়ে জোর করে পড়াতে, আমি পড়তাম,
কিন্তু বলব কি?
আমি তো এখন বরফে একা একা জাঙ্গিয়া পড়ার কথা ভাবছি না।


                                                                      (চিত্রঋণ : Edwin Holgate)

1 টি মন্তব্য:

  1. তোমার এই অন্যরকম দেখার ক্ষমতা আমার বরাবর খুব ভালো লাগে। একঘেয়েমি আসে না। শুভকামনা।

    উত্তরমুছুন