বিধবা বিড়াল ও
কবরের জানলা
বাড়িশুদ্ধু সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জেগে আছে ওরা
দুজন। কারণ ওরা চুমু খাচ্ছে। আর জেগে আছে অতিরক্ষিত এক বেড়াল। যদিও সে চুমু খাচ্ছে
না। বেড়ালটা বিধবা কারণ তাকে কোনোদিন বাড়ির বাইরের কোনো পুরুষ বেড়ালের সঙ্গে মিশতে
দেওয়া হয়নি। পাছে বাইরে না বেরিয়ে যায়,
বিবাহের তাড়নায়, তাই তাকে হয় বাক্সে,
নয় বাস্কেটে ভরে রাখা হয়, দরজা খোলা
থাকলে। বিধবা বিড়ালের চোখ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে, ঝুঁকে
পড়ছে একজোড়া জুড়ে যাওয়া ঠোঁটের ওপর। ঠোঁটদুটো জিভে জিভে একাকার হয়ে দুই শরীরের
সম্পূর্ণভাবে একে অপরের মধ্যে বিলীন হতে না পারাটাকে উদযাপন করছে। বিড়ালটা জুতোর
বাক্সের ভিতর একমনা। দরজা বন্ধ রয়েছে। এখন অনেক রাত।
কিছুদিন আগে বিড়ালটা চশমা নিয়ে খেলাধুলো
করছিলো। ফোরপ্লে যে অর্থে খেলাধুলো। করতে করতে প্রত্যাশিতভাবেই চশমার একটা ডাঁটি
ভেঙে গেল। একপেয়ে চশমাটা হাসপাতালে চলে গেলে চুমু খেতে সুবিধাই হল দুজনের। বিড়ালটা
বিধবাই রয়ে গেল। ক্যালেন্ডারে লোকনাথ বাবার ছবির দিকে ঠায় তাকিয়ে রইলো। শীত
গ্রীষ্ম বর্ষা নানা ঋতুর আতান্তরে পড়া বাইরের দিনরাতগুলো বিধবা বিড়ালের জানলা হয়ে
গেল। সে জানতো ঐ জানলার বাইরেই রয়েছে প্রেম,
বিবাহ, কাম, মাতৃত্বের
সম্ভাবনা। তাই সে নিজের বাস্কেটেও ছোটোখাটো একটা জানলা বানাতে সচেষ্ট হল। দিন রাত
মাস বছর কাটতে লাগলো কিন্তু তার জানলা আর তৈরী হলো না।
ওদেরকে এক তন্ত্রসাধক বলেছিল ফাঁক হয়ে থাকা
কবরের মধ্যে জ্যান্ত ভার্জিন বিড়াল ফেলে দিয়ে আসলে সকল মনোকামনা পূর্ণ হবে। ওদের
একটা মনোকামনা ছিল যা চুম্বন থেকে শরীরের সৃজন পর্যন্ত যেতে চেয়েছিল আর সেই সৃজন
যদি সম্ভব হয় তবে আর বিধবা বিড়ালের কি প্রয়োজন? সে তো আছেই, সৃজন নেই
বলে। তাই একদিন অনেক রাতে ওরা বিড়ালটাকে ওর বাস্কেটে ভরে কবরখানা নিয়ে গেল। আগে
থেকেই দেখে এসেছিল কবরটা। ফাঁক দিয়ে বিড়ালটাকে ঢুকিয়ে দিল। তখনো ওর বাস্কেটে জানলা
তৈরী হয়নি বলে ও পালাতেও পারলো না। বিড়ালটাকে ফেলে দিয়ে কবরের ফাঁক ওরা যথসম্ভব
বন্ধ করে দিল আর বাইরে দাঁড়িয়ে চুমু খেতে লাগলো। বিড়ালটা কষাটে কালো অন্ধকারের
মধ্যে মিয়াও মিয়াও করতে গিয়ে শুনলো তার শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তারপর আরেকজোড়া
চোখ দেখে বুঝলো, না, প্রতিধ্বনি
নয়, সঙ্গ রয়েছে নিরালা কবরের ভেতর। এভাবেই বিধবা বিড়াল
কবরের মধ্যে জানলা খুঁজে পেলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন