বাক্‌ ১১৪ ।। ৪টি পুনরাধুনিক কবিতা ।। রেনেসাঁ




"আমি তোমাকে চাই" কথাটি তীব্রবেগে গোঁয়ার তেজি ঘোড়ার মতো, ভাদ্রের কুকুরের মতো দৌড়োতে থাকে ঘরে। ঝটপট করে তছনছ করে সাজানো বালিশ, পর্দা। তারপর একফাঁকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় বহুবহু দূরে। আমি আর তোমাকে চাইনা।

"আমি তোমাকে আর চাই না" – এই কথাটার মধ্যে এত মহৎ একটা একা থাকা আছে, এত মহৎ একটা একা থাকা আছে, যেটা ঘড়ির কাঁটার ধীরগতির মধ্যে থাকে।



আমরা মানুষেরা হয় প্রেমে ক্লান্ত হই বা প্রেমহীনতায়।

একটা প্লেন আমার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল, আমি উপর দিকে তাকালাম, তাকিয়ে থাকলাম... এমনভাবে যেন ওভাবে তাকানোই উচিত আমার। তারপর ভ্রু কুঁচকে ভাবলাম আকাশটা সত্যি পচে গেছে। আমার আর বেশিদিন বাঁচা ভাল না।


(একটা দিন কবিতার চেয়ে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম নিজেই তবু নিজের চুলের মুঠি ধরে লেখার টেবিলে, লেখার চেয়ারে এনে ফেলি সত্যি বলতে, আমার কাঠ বা প্লাস্টিকের বা পাথরের কোন টেবিল নেই লেখার তবু একটা টেবিল বা চেয়ারের দাবি তো সবারই থাকে সেইসব দাবিগুলোই সবচেয়ে বড় সত্যি বাস্তবের সমস্ত অপ্রাপ্তি, প্রিয় দাবি, খারাপবাসা আমি উড়িয়ে দিয়েছি হাওয়ায়... মৌসুম্বীর রসের মত রোগের পথ্য হয়ে উঠছে জীবন খেতে ভালবাসে না কেউ, কিন্তু খায়)


প্যারালাইজড একটা সমুদ্র নদী তার মোহনায় ছুঁয়ে দিলে, তার কিচ্ছু আসে না, যায় না সমুদ্র ফ্যাকাশে হয়ে আছে হাতপামাথা কিচ্ছু নড়ে না

নদী কাঁদছে হাহা
নদী কাঁদছে; হাহা করে ফেটে যাচ্ছে চর
নদীর মুখ অল্প হাহা করা
তাতে সমুদ্রের লালা এসে পড়বে না আর কোনদিন

মৌসুম্বীর মত নিস্তেজ হয়ে পড়ছে নদী
নদী লুকিয়ে লুকিয়ে একটা মৌসুম্বী
এটা আমি টের পেয়েছি আজ থেকে ৩২ বছর আগে
আমার জন্মেরো আগে
এতদিন কাউকে বিশ্বাস করতে দিইনি
নিজেকেও না

৩২ই কেন বললাম, সেটা এখনো নিজেকে বলিনি
বলবও না কোনদিন

কিছু লেখা অসমাপ্ত থাকা খুব খারাপ

খারাপ যা যা বাকি আছে, নিজের সঙ্গে হোক


আমি একটা লোককে দেখলাম রাস্তায় আমার তাকে ভাল লেগেছে কিন্তু বেশ বয়স্ক লোকটি ওনার মনে হয় স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে হয়তবা সঙ্গে একটি প্রেমিকাও আমি দুঃখিত

ঘুমের বড়ি আমার গলা অবধি নেমে আটকে যায়, বিরাট একটা বিষ্ফোরণ হতে হতেও হয় না,
সারাবাড়িতে আগুন লাগতে লাগতেও লাগেনা

কিছুক্ষণ পর আবার সময় সুন্দর হয়ে আসে এবং কী আশ্চর্য,  আমি যুদ্ধ করি না সুসময়ের সাথে হাসতে হাসতে আমি ডায়েরি খুলি এবং আবার বাস্তবে ঢুকে পড়ি সেই ডায়েরী, যেটা বড় এবং ছোট দুঃখে ভরা এবং খালি ডায়েরীর অক্ষরগুলোর মধ্যে যে অক্ষরটা সবচেয়ে ভিজেআছে, সে হল পিয়নব্যাটা সে পিছন ফিরে একদৃষ্টে আমার দিকে চেয়ে আছে



আমি এখন বসে আছি
আমাদের দক্ষিণের জানলার ওপাশে নীতা পাগলি হয়ে
আমি এখন বসে আছি খেতে যাওয়ার আগে অবধি আমাকে দেখব বলে

একটি কুকুর হয়ে ডাক দিয়ে যাচ্ছি বাড়ির খিড়কিদরজার ওদিকে মা জানে না ওটা আমি তাই ওটাকে তাড়াতে হুটহুট করছে

এমনকি ভাইয়ের বিকট রাগ দেখে ভয় পেয়ে একটি প্লেন এইমাত্র উড়ে গেল, তার গোঙানিও ছিলাম আমি....



খুব প্রিয় কাজগুলো শেষ করার সবচেয়ে প্রিয় পদ্ধতি হল হঠাৎ করে চুপ করে যাওয়া...


                                                                        (চিত্রঋণ : রেনেসাঁ)

৩২টি মন্তব্য:

  1. অনবদ্য। দারুন লেখা রেনেসাঁ দি। বাক-এ তোমার লেখাটাই প্রথম পড়লাম। পুরো কবিতা পড়ার পর আমার প্রিয় পদ্ধতি হল হঠাৎ করে চুপ করে যাওয়া।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হুঁ। হঠাত করেই তো সব করি আমরা। - রেনেসাঁ

      মুছুন
  2. খারাপ যা যা বাকি আছে, নিজের সঙ্গে হোক |
    ♪ বিরাট একটা বিস্ফারন...
    যা তা হয়েছে

    উত্তরমুছুন
  3. ভাল লেখা । কিন্তু 'পুনরাধুনিক'স্ট্যাম্প মেরেছেন কেন একটু বঝিয়ে বলবেন , প্লিজ ।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বাক ১১০ এ পুনরাধুনিক কেন আমি এবং আমার কবিতা লেখা আছে। পড়ে নেবেন প্লিজ।

      মুছুন
    2. Style ও স্টাইল। কেন হঠাত এই প্রশ্ন অভিষেকদা?

      মুছুন
  4. প্রত্যেকটি দারুন লেগেছে, ৪ বেশি

    উত্তরমুছুন
  5. বাহ্ মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। সব গুলোই ভালো লেগেছে। শেষেরটা বেশ মনটানা..

    উত্তরমুছুন
  6. প্রিয় পদ্ধতি ভালো লাগল রেঁনেসা।

    উত্তরমুছুন
  7. তোর লেখা একনাগাড়ে পড়ে আলটপকা মন্তব্য করার নয়। আজ এখন পড়লাম। শেষ করলাম।এটাই আমার ভালো লাগার কারণ

    উত্তরমুছুন
  8. খুব ভালো লাগল রেনেসাঁ। যেমন লাগে আর কি বরাবরই। এত চমৎকার তোমার ভাবনা আর বিন্যাস ! বেশ ভালো।

    উত্তরমুছুন
  9. ভালো লাগলো, রেনেসাঁ। তোমার মতো করে তুমিতে যাওয়া এই চেষ্টা দুর্দান্ত।

    উত্তরমুছুন
  10. লেখাটিতে রিপিটেশনটা মন কেড়ে নেওয়ার মতো । বোঝা যায় যে ওই স্পেস ও টাইমে কত জিনিস নতুন ভাবে চরিত্র পেয়েছে। ১ এর রেশটা ভেঙে গিয়েছিল কিন্তু সেটা ৩ এ গিয়ে ধরে নিলো।

    উত্তরমুছুন