বাক্‌ ১১৪ ।। গল্পনা ।। রঙ্গন রায়




ডেথ সেন্টেন্স

তাকান।
আপনাকেই বলছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে লাভ নেই। এ ঘরে শুধু আপনিই আছেন। আমাকে দেখতে হবেনা। পাবেননা। ওই ক্যালেন্ডারের ভেতর বসে আছেন রামকৃষ্ণ। মনে হচ্ছে এক্ষুনি উঠে এসে আপনাকে কষিয়ে মারবে এক চড়, "শালা , পেপার পড়তে পড়তে যৌন চিন্তা!" হ্যাঁ , ভাবুন না কৃষ্ণের বকাসুর বধের দৃশ্য। দুটো চঞ্চুকে ধরে দু ফাঁক করে দেওয়া ... এটাও তাই। মাঠের মধ্যে থেকে ভেসে আসছে এক নারীর চিৎকার, আর ৮জন পুরুষ প্যান্টের জীপার লাগাতে লাগাতে উঠে আসছে পৃথিবীতে... ওদের চোখ-মুখ থেকে ঝরে পড়ছে অন্ধকার, আর নগ্ন নারীর দুটো পা  হয়ে গেছে বকাসুর চঞ্চু ... সাদা সাদা  বীর্য গুলো ছড়িয়ে ছিল সারা দেহে - এখন জল -রক্ত। পেপার বন্ধ করে দিন। আপনার মনে দুটো চিন্তা প্রবেশ করেছে - প্রথমত মনে হচ্ছে একটু স্ত্রীর কাছে যাই, সাথে সাথে মনে পড়ছে আপনার মেয়ে তো প্রাইভেট টীউশন গেছে!
ভয়!
একটা চরম ভয় গ্রাস করলো আপনাকে আর অমনি ঝুলে গেলো আপনার যৌবন ... যান বাথরুমে যান। চোখেমুখে ছিটিয়ে আসুন কিঞ্চিৎ জীবন। বেশি চিন্তা করলে আপনার মাথার ভেতর থেকে ঘিলু বেরিয়ে যাবে। সেলুলয়েড ফ্রেমের চশমা খুলে রাখুন, কাচের পৃথিবী নয় একটু বাস্তবতা খুঁজে আনুন মুঠো ভরে। আপনার চোখ বাথরুমের দেওয়ালে আঁটকে গেলো ... শ্যাওলা ছোপ ধরা দেওয়ালে যেন একটা চিত্র ভেসে উঠছে -স্ট্র্যাপ ছেড়া ব্রেসিয়ার পড়ে দৌড়চ্ছে আপনার মেয়ে, ক্লাস টেন, আর পিছলে পিছলে যাচ্ছে আগন্তুকের ভীড়- একটা পুরো গ্রাম এগিয়ে আসছে, একটা পুরো সমাজ এগিয়ে আসছে, আর আপনি কুচিকুচি হয়ে টুকরো হয়ে যাচ্ছেন কাঁটাতারের নির্মম ধাঁধাঁয়। আপনি চোখে অন্ধকার দেখছেন? হ্যাঁ, ঠিক, এটা আপনার জ্ঞান হারানোর পূর্ব মূহুর্ত ... আবার যখন আপনি জ্ঞান ফিরে পাবেন তখন আপনার মস্তিষ্ক বদলে যাবে, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠবেন, আপনার সামনে ছড়িয়ে নামবে বিদ্যুৎ ... ভাবুন 'কতক্ষন আর আছি এই আমি হয়ে, এরপর আমি অন্য আমি হয়ে যাবো।'
আপনি পড়ে যাচ্ছেন - গলা দিয়ে দমকে উঠছে বিষম, শ্বাসনালীটা আপনি নিজেই চেপে ধরেছেন। অসহ্য আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পেরেছেন, তাইনা? টেলিভিশনের সাথে , পেপারের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে এই মুখ। নাহ্ , এতো আপনার মুখ নয়! মুখোশ! চামড়ার সাথে যুক্ত হয়ে আছে, খুলতে হবে, কেটে ফেলতে হবে কবজ কুন্ডলের মত, একটা ব্লেড  ভ্রু মধ্যে জেগে উঠছে শত সহস্র শতদল, আর পাপড়ি গুলো হয়ে উঠছে পিরামিড, মমি হয়ে যাচ্ছে মুখটাপকেট হাতড়ে ব্লেড মেলেনা, মণিবন্ধ স্পর্শ করতে করতে একটা জীবন, একটা ব্লেড, একটা মুখোশ, একটা মুখ - এই মুখেরও মেয়ে আছে, সেই মেয়েটা দৌড়চ্ছে - ব্রা পরেএই মুখেরও স্ত্রী আছে, দৌড়চ্ছে ব্রা পড়ে। আপনাকে আঁটকে রেখেছে ওরা। আপনাকে পেলে ওই গ্রাম ছিড়ে কুটিকুটি করবে। ভাবুন এক্ষুনি জ্ঞান হারাবেন নাকি কালকের সকালের জন্য - যখন আপনাকে স্নান করিয়ে, চুল-দাড়ি কাটিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে, সুস্বাদু খাবার খাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে একটা রুমে ... 
চিন্তা গুলোকে জট পাকাবেন না। খবরের কাগজটা দলা পাকিয়ে একটু 'বল বল' খেলুন ...  এই হাত ধরেছে অনেক মাংসের বল , কাল এই হাত থাকবে পেছনে বাঁধা , আর খুলবেনা। আপনার সমস্ত শরীর থেকে ভেসে আসছে পচা মাংসের গন্ধ। আপনি পচে গেছেন , তাই রামকৃষ্ণ ক্যালেন্ডার থেকে বের হয়ে আপনাকে কষিয়ে চড় মারেননি। উনি পচা জিনিস স্পর্শ করেননা।
আপনার মাথায় এখন যথেষ্ট ঘিলু নেই - সব খেয়ে গেছে জজসাহেব। অসহ্য টেনশনে ব্লাড প্রেশার ফল্ করছেসিরিয়াল কিলিং-এর মত সিরিয়াল রেপটাও শিখে নিতে পারতেন, একটা নিখুঁত আর্ট , উহ্  শিল্পই তো জীবন, কিছুই শেখা হলোনা আপনার দ্বারা।
দাঁড়ান দাঁড়ান , এখন তো সবে পড়ে গেছেন, মারা যাননিবেসিনের জল তলার পাইপ দিয়ে হুড়হুড় করে বের হয়ে ভেসে যাচ্ছে অন্ধকার - নোঙরা - স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলা পড়া বাথরুম। আপনার পড়ে যাওয়া কেউ দেখতে আসবেনা। ভাবুন সেই রাতের কথা কিংবা আজকের রাত আর ৭ মিনিট মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে, তারপর জ্ঞান হারাবেন, এটা আন্তর্জালের ইনফরমেশন, ভুল হতেই পারেনা। চোখ বুজে থাকুন। পায়ের আঙুল তিরতির করুক, মস্তিষ্ক এখনো সজাগ। কেউ ছুটে আসবেনা। গীতার শ্লোক গুলো ছুটে আসছে, কৌরবপক্ষ থেকে ছুটে আসছে দুঃশাসন আর আপনার মাথার ভেতর ঢুকে পড়ে লুন্ঠন করছে আপনার মস্তিষ্কের আব্রু। কাল যখন আপনি ঐ রুমটায় পৌঁছবেন তখন চারিদিকে সশস্ত্র কড়া পাহারা; ভাবুন, একবার, আপনার জন্য, কিছুক্ষণ হলেও গোটা দেশ তৎপর - প্রতিটি নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ, মিডিয়াশুধু আপনারই জন্য।
এবার দেখুন ভেসে আসছে কর্ণের রথের চাকা, আপনার ঘিলু তরল তেল হিসেবে ব্যবহার করতে চান উনি। চাকা আটকেছে, তেল দিলে স্মুদ হবে। নিন, এবার আপনার মাথাটা ফাঁকাকাল আপনাকে ওই রুমেও নিয়ে যেতে পারে আবার অ্যাসাইলামেও, সবই ভাগ্যের খেলা, নয়তো আজ রাতেই বরফের ড্রয়ারে ...
দেখুন , আপনার কোনটা পারফেক্ট মনে হয় - এ পারফেক্ট সুইসাইড না এ পারফেক্ট হ্যাঙ্গিং
এবার আপনি মাথা ঘুরে, দেওয়াল জুড়ে, গারদ জুড়ে পড়ে থাকুন। রাত এখনো পড়ে আছে।


                                                (চিত্রঋণ : Alexander Calder / ‘Untitled, 1945’)

৫টি মন্তব্য: